পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই পরিবারের ৩ ভাই-বোন ৩ মেরুতে অবস্থান করছে। এই তিন ভাই বোন হলেন চাটমোহর উপজেলা বিএনপির প্রয়াত নেতা হাজী আক্কাছ আলী মাস্টারের বড় ছেলে আলহাজ্ব হাসানুল ইসলাম রাজা, তৃতীয় পুত্র মো. হাসাদুল ইসলাম হীরা এবং বড় মেয়ে এ্যাড. আরিফা সুলতানা রুমা।
জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা,বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব মোঃ হাসানুল ইসলাম রাজা। ইতোমধ্যে তিনি পাবনা-৩ আসনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৫ আগষ্টের পর প্রচারণার শুরুতে রাজা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নামেন। ইতোপূর্বে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন পাবনা-৩ আসনে। ঘুষ,দূর্নীতি,চাঁদাবাজ,দখলবাজ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে তিনি প্রচারনা শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রার্থীর জন্য মাঠে নামেন। স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে হাটে,মাঠে,গ্রাম-গঞ্জে, বাজার, দোকান-পাটে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। তার রেকর্ডকৃত বক্তব্য পাবনা-৩ এলাকার সর্বত্র মাইকে প্রচার করা হয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহীনকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষনা দেন।
এদিকে চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র মো. হাসাদুল ইসলাম হীরা দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত সকল আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে এসেছেন। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীকে সংগঠিত করতে তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের কারণে একাধিক মামলার শিকার হয়েছেন। করেছেন হাজতবাস। তিনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালালেও কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহীনকে দল মনোনয়ন দিলে তিনি স্থানীয় প্রার্থীর দাবীতে মশাল মিছিলসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছেন।
অপরদিকে এ্যাড. আরিফা সুলতানা রুমা ৯০’র দশ থেকে ঢাকায় প্রথমে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রদল এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য হিসেবে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। ঢাকায় আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের দায়ের করা একাধিক মামলার আসামী হয়ে কারাবাস করেছেন। চাটমোহরের মেয়ে হিসেবে ইতোমধ্যে স্থানীয় রাজনীতিতেও তার একটি শক্ত অবস্থান তৈরী হয়েছে। তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু দল কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে মনোনয়ন দিলে রুমা তাকে সমর্থন দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে পাবনা-৩ এলাকার সর্বত্র বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
৩ ভাই-বোন ৩ মেরুতে অবস্থান করার কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
পাবনা-৩ আসেনে একই পরিবারের ৩ জন ছাড়াও সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আলহাজ্ব কেএম আনোয়ারুল ইসলাম পাবনা-৩ আসন থেকে ২ বার বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি হাসাদুল ইসলাম হীরার সাথে যৌথভাবে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের মনোনয়ন পরিবর্তন করে স্থানীয় প্রার্থীর দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পাবনা-৩ এলাকায় বিশেষ করে চাটমোহরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রকাশ্যে দ্বিধা-বিভক্তি লক্ষ্য করা গেছে। আনোয়ারুল-হীরা সম্প্রতি একাধিক মশাল মিছিল থেকে ঘোষণা দিয়েছেন পাবনা-৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন না হলে তাদের মধ্যে যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া এবং ফরিদপুর উপজেলা মোট ৪ লাখ ৮১ হাজার ৯’শ ৬২ জন ভোটার রয়েছে।
এর মধ্যে চাটমোহর উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৮ হাজার ৬’শ ৪৬ জন এবং মহিলা ১ লাখ ২৮ হাজার ১৯৫ জন।
ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ৭৭৮। এর মধ্যে পুরুষ ৫৪ হাজার ২’শ ৬২ জন ও মহিলা ভোটার ৫৪ হাজার ৫’শ ১৩ জন।
ফরিদপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ৩’শ ৪৩ জন। পুরুষ ৫৮ হাজার ১’শ ৮৩ জন ও মহিলা ৫৮ হাজার ১’শ ৫৬ জন। (অক্টোবর/২৫ পর্যন্ত)।
তবে পাবনা-৩ আসনে ধানের শীষের বিরুদ্ধে স্থানীয় কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলে পাল্টে যেতে পারে সকল হিসাব-নিকাশ। সেক্ষেত্রে জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক মো. আলী আছগর মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চলে আসতে পারে বলে দায়িত্বশীল মহল মনে করছেন।
এদিকে নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা করা হলে ভোটের মাঠ পরিবর্তিত হবার সম্ভাবনায় দেখছে দলীয় নেতাকর্মীরা।