রবিবার , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভাঙ্গুড়ায় ধর্ষণ–সালিশের পরদিন রেললাইনে মরদেহ: স্বেচ্ছাচারী শাস্তি, নাকি চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা?

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মসজিদপাড়ায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে সালিশ ডেকে জরিমানা ও মারধর করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই অভিযুক্ত যুবকের রেললাইনে কাটা মরদেহ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি শুধু একটি মৃত্যুর রহস্যই নয় গ্রাম্য সালিশের নামে স্বেচ্ছাচার, প্রভাবশালীদের ‘বিচার-বাণিজ্য’ ও আইনবহির্ভূত শাস্তির নতুন প্রশ্নও তুলেছে। মারা যাওয়া যুবক হাফিজুল ইসলাম (২৪) পেশায় ছিলেন দিনমজুর। তিনি ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের মসজিদপাড়া মহল্লার মৃত ছাবেদ আলীর ছেলে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে প্রতিবেশী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন হাফিজুল। ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন তরুণীর চাচি। তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে হাফিজুলকে ধরে একটি কক্ষে আটকে রাখে। কিন্তু কড়া পাহারার মধ্যে আটক থাকা যুবক হঠাৎ করেই পালিয়ে যান। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা কেউই স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না হাফিজুল পালালো কিভাবে।

ঘটনার দিন রাতেই ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা ও স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর বরাত আলী বাড়িতে সালিশ বসানো হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মোন্নাফ কসাই, রবিউলসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। প্রথমে জরিমানা ধার্য করা হয় পাঁচ লাখ টাকা। হাফিজুরের পরিবার দরিদ্র হওয়ায় পরে তা কমে আসে আড়াই লাখ টাকাতে। এই সালিশ চলাকালেই কয়েকজন উপস্থিত ব্যক্তি হাফিজুলকে মারধর করেন বলে দাবি স্থানীয়দের।

এদিকে সালিশের রাত পেরোতেই শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার গুয়াখড়া এলাকায় রেললাইনে পড়ে থাকা মরদেহটি শনাক্ত হয় হাফিজুলের লাশ হিসেবে।

স্থানীয়রা বলছেন, কেবল অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো প্রমাণ ছাড়াই অর্থদণ্ড ও মারধর এ কি গ্রাম্য বিচার, নাকি ব্যক্তিগত প্রভাব প্রতিষ্ঠার বাজার? মারধর ও অপমানের পর সে কি চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করল? নাকি সালিশের সময় ঘটা নির্যাতনের জটিলতায় অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে?
তারা আরো বলছেন, “আইন আছে, পুলিশ আছে তবুও এমন গুরুতর অভিযোগে সালিশ করার সাহস তারা কিভাবে পেল? সালিশ শেষে তাকে শেষবার অত্যন্ত ভীত, বিষণ্ন ও শারীরিকভাবে দুর্বল অবস্থায় দেখা গেছে। হাফিজুরের ওপর চাপ ছিল, টাকা জোগাড়ের শঙ্কা ছিল, এবং ভয়ও ছিল। এ কারণেই হয়তো সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।”

মানবাধিকারকর্মী শহিদুল ইসলাম বলছেন, ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল মামলায় আইন অনুযায়ী অভিযোগ নেওয়া, মেডিকেল পরীক্ষা, তদন্ত সবই হওয়া উচিত ছিল থানার মাধ্যমে। কিন্তু সেখানে বসেছে গ্রাম্য সালিশ, জরিমানা নির্ধারণ, এবং শারীরিক নির্যাতন। এ ধরনের ‘বিচারবহির্ভূত সালিশ সংস্কৃতি’ শুধু ভুক্তভোগী নয়, অভিযুক্ত এমনকি পুরো সমাজকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে।

সাবেক কাউন্সিলর বরাত আলী প্রথমে সালিশের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমি বাইরে আছি, পরে কথা বলব।”

মোন্নাফ কসাইও একইভাবে অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।

সালিশে উপস্থিত থাকা হাফিজুলের মামা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের পারিবারিক টাকা-পয়সার বিষয়ে কাউন্সিলর বরাত আলীর বাসায় বসে ছিলাম। তবে হাফিজুল কে জরিমানা ও মারধরের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমরা মরদেহ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশকে হস্তান্তর করেছি।

সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থল আমাদের থানার বাইরে।

এত গুরুতর অভিযোগের পরও কোনো থানাই এখনো জানতে পারেনি, সালিশে ঠিক কী ঘটেছিল, মারধরের মাত্রা কতটা ছিল, কিংবা আত্মহত্যার পেছনে কোনো প্ররোচনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগও স্পষ্ট নয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।