পাবনার ভাঙ্গুড়ায় জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে রাখা হয়েছে একটি চৌকি। যেখানে নিয়মিত বিশ্রাম নেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত আলী ও তার স্ত্রী সহকারী গ্রন্থাগারিক আঞ্জুয়ারা বেগম। বিদ্যালয়ে এমন অমার্জিত কর্মকান্ডে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে খাট পেতে বিশ্রাম করতেন। তার স্ত্রী বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের দিয়ে কাপড় ধোয়া, খাবার রান্না করানোসহ ব্যক্তিগত কাজ করাতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৪ সালে বিধি বহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান শওকত আলী। পরবর্তীতে ২০১২ সালে জাল সনদধারী স্ত্রীকে সহকারী গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। এসব অনিয়মের অভিযোগে ২০১৩ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে শওকত আলী সাময়িক বরখাস্ত হন এবং ২০১৮ সালে অনিয়মের মামলায় দুই সপ্তাহ কারাভোগ করেন। তবে দীর্ঘদিন পর মামলা প্রত্যাহার করিয়ে পুনরায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ফিরে পান তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই আবারও স্বেচ্ছাচারী আচরণ শুরু করেন বলে অভিযোগ শিক্ষক-অভিভাবকদের।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কক্ষের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। অনেক ডাকাডাকির পর দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী। এ সময় কক্ষের চৌকির ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, এই বিদ্যালয় ভাঙ্গুড়ার একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে অভিভাবকরা আর মেয়েদের এখানে ভর্তি করাবে না।
অভিভাবক রোজিনা খাতুন বলেন, আমরা মেয়েদের এই স্কুলে পাঠিয়ে লজ্জায় পড়েছি। শিক্ষক যদি স্কুলে বিশ্রামাগার বানান, তাহলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক অফিস ও লাইব্রেরিকে ব্যক্তিগত স্থানের মতো ব্যবহার করেন। এতে অন্য শিক্ষকদের মানসম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শওকত আলী বলেন, আমি বিদ্যালয়ে বিশ্রাম করি না। মাঝে মাঝে অফিসের স্টাফরাই এখানে বিশ্রাম করে। বিদ্যালয়ে বিশ্রামের জন্য চৌকি রাখা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাপস পাল বলেন, এমন কর্মকান্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় ও শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।