শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে উৎসবের আমেজে ভাসছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা। প্রতিটি পূজামণ্ডপে চলছে প্রতিমা ও মণ্ডপ সাজসজ্জার শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ। প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা দিনরাত এক করে কাজ করছেন। তাদের হাতের ছোঁয়ায় মাটি, খড়, বাঁশ, রঙ ও সাজসজ্জার উপকরণে প্রাণ পাচ্ছে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমা।
কাঠামো ও মাটির কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন চলছে রঙ-তুলির টান এবং নকশার কাজ। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমাগুলোতে দিচ্ছেন শেষ মুহূর্তের শৌখিন সাজ। শিল্পীদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও সমানভাবে কাজ করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই ব্যস্ততা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন স্থানীয় ভক্তরা।
প্রতিমা শিল্পীরা জানালেন, প্রতিবারের মতো এ বছরও তারা প্রতিমা নির্মাণে প্রাণ ঢেলে দিচ্ছেন। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় খরচ সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। খড়, বাঁশ, কাঠ, রঙসহ প্রতিটি উপকরণের দাম আগের তুলনায় বেশি হলেও তারা উৎসবের আনন্দকে ভক্তদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একজন শিল্পী বলেন, আমরা কয়েক সপ্তাহ ধরে দিন-রাত পরিশ্রম করছি। এখন শেষের দিকে এসে রঙের কাজ চলছে। আশা করি সময়মতো সব প্রতিমা তৈরি শেষ করতে পারব। পূজার আনন্দ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে এই আশাতেই আমরা পরিশ্রম করছি।
এবার উল্লাপাড়া উপজেলায় মোট ৯৫টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে উপজেলা শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে সমান উৎসাহে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিমার পাশাপাশি পূজামণ্ডপগুলোতেও চলছে সাজসজ্জার কাজ। আলোকসজ্জা, ফুলের সাজ, রঙিন কাপড় ও নানা ধরনের নকশায় সাজানো হচ্ছে প্রতিটি মণ্ডপ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও চলছে প্রতিমার চোখ আঁকার কাজ, কোথাও আবার সাজসজ্জার জন্য কাপড় ঝোলানো হচ্ছে। স্থানীয় যুবকরাও পূজা কমিটির সঙ্গে মিলে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে আবার স্বেচ্ছাশ্রমে পূজামণ্ডপ সাজাতে যুক্ত হয়েছেন।
পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, পূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। প্রতিটি পূজামণ্ডপে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ নজরদারি থাকবে।
উল্লাপাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুজিত ঘোষ বলেন, আমরা আশা করি, সবার সহযোগিতায় এবারও সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা আমাদের সঙ্গে থাকবে। তাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই উৎসব উদযাপন করা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় এখন উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে উল্লাপাড়া। পূজাকে কেন্দ্র করে গ্রাম থেকে শহর সবখানেই দেখা যাচ্ছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। ভক্ত-অনুরাগীদের মুখে এখন শুধু একটাই প্রত্যাশা সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন।