নওগাঁর রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের তালাবদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। হামলাকারীরা বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সহ দু’টি বৈদ্যতিক মিটার ভাঙচুর ও পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। গত রবিবার রাতে উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামের রশিদুল ইসলামের বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে দুপুরের দিকে রাণীনগর থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের তালাবদ্ধ (আবদ্ধ) থেকে মুক্ত করে।
রশিদুলের ভাই নিকিদুল ইসলাম জানান, তার বড় ভাই রেজাদুল ইসলাম ও ভাবির মধ্যে মনোমানিল্য হওয়ায় দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন ভাবি। চলতি মাসের ৭ তারিখে বাবা আলেফ হোসেন মারা গেলে দাফন-কাফনের জন্য ভাবি এসে বাড়িতে উঠতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয়। দাফন শেষ হলে আবারো ভাবি বাড়িতে উঠতে চাইলে ভাবির খালাতো ভাই একই গ্রামের সাইফুল ইসলামের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে।
এরই জেরধরে ওই দিন দুপুরে আবারো সাইফুল ইসলাম ও রশিদুলের স্বজনদের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি নিয়ে মিমাংসার কথা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে রবিবার বিকেলে লোকমারফত খবর দেওয়া হয় রাতেই সালিশ-বৈঠক হবে। এরপর সন্ধ্যায় আবারো কয়েকজন এসে জানায় রাতেই বৈঠক হবে এবং হাজির থাকতে হবে। বৈঠকের দিন পরিবর্তন করার কথা বললেও তারা কথা শোনেনি। সালিশে হাজির না হওয়ায় ইউনুস আলী, ফিরোজ হোসেন, আতোয়ার হোসেন সহ গ্রামের লোকজন এসে বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে চলে যায়। পুলিশ চলে যাবার পর রাত তিনটার দিকে আবারো লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন এবং দু’টি মিটার ভাঙচুর করে। এছাড়া পানির লাইন বন্ধ করে দিয়ে বাড়ির বাহিরের মেইন গেটে তালা দিয়ে আবদ্ধ করে রাখে। এ ঘটনায় ভাই রশিদুল বাদি হয়ে সোমবার দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
রশিদুল ইসলাম জানান, রাতে যখন পুলিশ এসেছিল ওই সময়ই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করলে থানা পুলিশ দুপুরের দিকে এসে আমাদের পরিবারকে মুক্ত করে।
রঞ্জনিয়া গ্রামের মাতব্বর ইউনুস আলী ও আতোয়ার হোসেন বলেন, রশিদুলের ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরধরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০জন ভারাটিয়া লোকজন এনে গ্রামের সাইফুলের উপর হামলা ও মারপিট করে গুরুত্বর আহত করে রশিদুলরা। সাইফুলকে প্রথমে রাণীনগর এবং পরে বগুড়া হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এ ঘটনাটি সমাধানের জন্য রবিবার রাতে গ্রামে সালিশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু রশিদুল ও তার পরিবারের লোকজন সালিশে হাজির না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের লোকজন খুঁটি থেকে বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে গ্রামের কোন লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা বা মিটার ভাঙচুর কিম্বা তালাবদ্ধ করেনি। এগুলো রশিদুলের লোকজন করে আমাদের উপর মিথ্যা দায় চাপাচ্ছে।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জুলফিকার আলী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবদ্ধ অবস্থা থেকে পরিবারকে মুক্ত করা হয়েছে।
রাণীনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাবলু পাল বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাবার পর সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে তালাবদ্ধ থেকে ওই পরিবারকে মুক্ত করা হয়েছে। বাদি মামলা দায়ের করলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।