বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার পিপিএম (বার) মহোদয়।
ঘটনার বিবরণ : ভিকটিম অমন্ত সেন তংচংগ্যা (৪৬), পেশায় একজন ইজিবাইক (টমটম) চালক। সে প্রতিদিন সকাল অনুমান ০৭:০০ ঘটিকা থেকে সন্ধ্যা অনুমান ০৭:০০ ঘটিকা পর্যন্ত রোয়াংছড়ি স্টেশন ও তার আশপাশের এলাকায় ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তার বসতঘর দূরে ও পাহাড়ের উপরে হওয়ায় সে প্রতিদিন দুপুর বেলায় তার ভাই রোসিকো তংচংগ্যা এর বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে এবং সারাদিন ইজিবাইক (টমটম) চালিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার ইজিবাইকটি তার ভাই এর বাসায় চার্জে দিয়ে বাড়িতে চলে যায়। গত ১৪/০৯/২০২৫ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭:०० ঘটিকার সময় সে প্রতিদিনের মতো তার ইজিবাইকটি তার ভাইয়ের বাসায় চার্জে দিয়ে তার বাসায় যাওয়ার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ ১৫/০৯/২০২৫ইং তারিখ সকাল পর্যন্ত সে বাসায় ফিরে নাই। তখন তার ভাই রোয়াংছড়ি থানায় সংবাদ দেয় এবং থানা পুলিশের সাথে ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন মিলে তাকে খুঁজতে থাকে।
খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জানা যায় ভিকটিম ১৪/০৯/২০২৫ইং তারিখ রাত অনুমান ১১:০০ ঘটিকা পর্যন্ত ওয়াগয়ে পাড়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জনৈক ফয়েজ এর বেলুন তৈরির কারখানায় বসে কারখানার কর্মচারী সোহেল ও ইব্রাহিম এবং কারখানার মালিক ফয়েজসহ মোবাইলে ক্রিকেট খেলা দেখেছিল। ক্রিকেট খেলা দেখা শেষে রাত অনুমান ১১:০০ ঘটিকায় ভিকটিম তার বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ ১৫/০৯/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ সকাল ০৮:০০ ঘটিকা পর্যন্ত বাড়িতে না যাওয়ায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গত ১৫/০৯/২০২৫খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১০:০০ ঘটিকার সময় রোয়াংছড়ি থানাধীন ৩নং আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নাথিং ঝিরি সাকিনস্থ জনৈক মেদু মার্মা’র ভাড়াটিয়া বাসার পিছনে তারাছা খাল সংলগ্ন বাঁশঝাড়ের নিচের কাঁচা রাস্তার উপর কাদা মাখা অবস্থায় ভিকটিমের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগ ও মোবাইল পাওয়া যায় এবং উক্ত স্থানে রক্ত মাখা অবস্থায় দুইটি কাঁচা বাঁশের বড় কঞ্চি ও একটি ভাঙ্গা গাছের টুকরা পাওয়া যায়। এছাড়াও ঘটনাস্থলে প্রচুর রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়। রোয়াংছড়ি থানা পুলিশ উক্ত আলামতগুলো জব্দ করে। ভিকটিমকে খোঁজাখুঁজির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে।
গত ১৬/০৯/২০২৫ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬:৩০ ঘটিকার সময় বান্দরবান সদর থানাধীন বান্দরবান পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড এর কাশেমনগর সাকিনের সাঙ্গু নদীর কিনারায় পানির উপর ভাসমান অবস্থায় একটি মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়। লাশটি নিখোঁজ ভিকটিম অমন্ত সেন তংচংগ্যার মর্মে সনাক্ত হয়। বান্দরবান সদর থানা পুলিশ ও রোয়াংছড়ি থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করতঃ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি ও পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশে থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামিদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করে। অভিযানিক দল গত ২০/০৯/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ সন্দেহভাজন আসামি রাজন্ত তঞ্চংগ্যাকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করে মুনাফা দেয়ার শর্তে সে ভিকটিম অমন্ত সেনকে মোট ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সাত-আট মাসেও ভিকটিম তাকে কোন টাকা দেয়নি। গত ১৪-০৯-২৫ ইং তারিখ রাত অনুমান ১০ টার সময় রোয়াংছড়ি বাসস্ট্যান্ডের পাশের নতুন সেলুনের দোকানের সামনে ইটের রাস্তার মাথায় ভিকটিমের সাথে তার দেখা হয়। তখন তিনি জরুরি প্রয়োজনে ভিকটিমের নিকট থেকে পাওনা টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা চাইলে ভিকটিম ক্ষেপে গিয়ে তাকে বলে যে, “এখন কোন টাকা নাই। এ বিষয়ে পরে কথা বলব”। তখন আসামি তাকে অন্তত ৫০০০ টাকা দিতে বলে। তারপরও ভিকটিম কিছু না বলে চলে যায়। তখন আসামি পথে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রাত অনুমান ১১ ঘটিকার সময় ভিকটিম বাড়ি যাওয়ার পথে দেখা হয়। তখন ভিকটিম আসামিকে এখনো বাড়ি যায়নি কেন জিজ্ঞসা করলে আসামি তাকে বলেন তার টাকার খুব দরকার। টাকার জন্য সে অপেক্ষা করতেছে। তারা একই পথ ধরে বাড়ির দিকে যেতে যেতে পাওনা টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাঁশঝাড়ের নিচে গেলে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ভিকটিম আসামিকে সজোরে ধাক্কা মারলে সে মাটিতে পড়ে যায়। সেখান থেকে উঠে তার সাথে হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আসামি আবার পাশের একটি গর্তে পড়ে যায়। ওখান থেকে উঠে তার বাম হাত দিয়ে ভিকটিমের গলায় অত্যন্ত জোরে ঘুসি মারি। ঘুসি মারার পর সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন আসামি সেখানে পড়ে থাকা একটি কাঁচা বাঁশ নিয়ে তাকে জোরে জোরে অনেকগুলো আঘাত করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে আসামি পাশের সাঁকো থেকে একটি গাছ টেনে নিয়ে তার মাথার পেছনের দিকে সজোরে আঘাত করলে ভিকটিম ছটফট করতে করতে মারা যায়। তারপর তার লাশটি টেনে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী তারাছা খালের পানিতে ভাসিয়ে দেয়।
এসময় জনাব আবদুল করিম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), বান্দরবান পার্বত্য জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।