বৃহস্পতিবার , ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

অভয়নগরে বিদ্যালয় ঘিরে কোমর পানি, পড়াশোনা বাদ দিয়ে মাছ ধরছে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

যশোরের অভয়নগরসহ তিন উপজেলার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, আর যেসব প্রতিষ্ঠানে আঙিনায় পানি রয়েছে সেখানেও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণে ক্লাস্টার ভিত্তিক পাঠদান এবং পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হবে।

টানা বর্ষণের কারণে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি উত্তরপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম চললেও শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত মাত্র একজন। শিক্ষার্থী জানান, আশপাশের গ্রামগুলো পানির তলে তাই ক্লাসে উপস্থিতি নেই।

এলাকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ভবদহ অঞ্চলের অধিকাংশ প্রাইমারি থেকে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ পর্যন্ত আঙিনায় কোমর অবধি পানি জমে রয়েছে। ক্লাসরুমে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানের। অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পথে বালির বস্তা ফেলা বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হলেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উপস্থিতির হার খুবই কম। এক ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪-৫ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা বলছেন, গ্রামের পর গ্রাম জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। রাহুল দাস নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এলাকার চারপাশে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে দূর দূরান্তের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। আশপাশে যাদের বাড়ি তারা কেবল বিদ্যালয়ে আসে। এ কারণে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। শর্মিলা দাস নামে এক অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে কোমর সমান পানি থাকায় সন্তানকে একা পাঠানো যায় না। তাই কোলে করে স্কুলে দিয়ে আসতে হয়। বাড়ি ঘর, রাস্তাঘাট ও স্কুল সব জায়গায় পানি জমে রয়েছে। দুইদিন বাদে ছেলের পরীক্ষা; তাছাড়া বাড়িতে রাখলেও আটকে রাখতে হয় সেজন্য স্কুলে দিয়ে যাচ্ছি। শ্যামলী দাস নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সব জায়গায় পানি। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। স্কুলের সামনেও পানি; তবে ভবনে পানি ওঠেনি। তাই প্রতিদিন কোলে করে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাই। প্রতিবছরই এই ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান চাই।’ নির্মল দাস নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পানি উঠে গেছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাসে না আসায় পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। এভাবে বছরের চার মাস অতিবাহিত হয়, ফলে শিক্ষার্থীরা পাঠদানে পিছিয়ে পড়ছে ও অনেকে ঝরে পড়ছে।’সঞ্জয় কুমার পাল নামে আরেক শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলের সামনে বালির বস্তা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হলেও পানি বাড়ায় তা তলিয়ে গেছে। এরপর বাঁশের সাঁকো করা হয়েছে। যে অভিভাবকরা তৎপর, তাদের সন্তানই শুধু বিদ্যালয়ে আসে। কোনো ক্লাসে ৫-৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী দেখা যায় না।’ নারায়ণ চন্দ্র নামে আরেক শিক্ষক বলেন,

শতাধিক শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও পানির কারণে তারা ক্লাসে সময়মতো আসছে না। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের আনার চেষ্টা করি, কিন্তু চারপাশে জলাবদ্ধতার কারণে তারা আসতে আগ্রহ দেখায় না। তাছাড়া জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেকেই মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও পানির কারণে তারা ক্লাসে সময়মতো আসছে না। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের আনার চেষ্টা করি, কিন্তু চারপাশে জলাবদ্ধতার কারণে তারা আসতে আগ্রহ দেখায় না। তাছাড়া জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেকেই মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। ‘জলাবদ্ধতার কারণে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না, শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে পড়ছে। একমাত্র সমাধান হলো জলাবদ্ধতা নিরসন। সরকার অনেক অর্থ ব্যয় করলেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসছে না। আমরা চাই বিদ্যালয়ের আসার পথ ও মাঠ উঁচু করে দেয়া হোক। এতে চালু রাখা সম্ভব হবে বিদ্যালয়গুলো।’এবিষয়ে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, তিন উপজেলায় ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এতে উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। জলাবদ্ধ বিদ্যালয়গুলোর ছবিসহ মাটি ভরাটের আবেদন জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে পানি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় করাতে কিছুটা সময় লাগছে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ভবদহ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি অর্ধশতাধিক নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য ক্লাস্টার ভিত্তিক পাঠদান ও পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হবে।

 উল্লেখ, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার নদীগুলো পলিতে ভরে যাওয়ায় ৮০’র দশক থেকে স্থায়ী রূপ নিয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এটি প্রকট আকার ধারণ করে।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।