বৃহস্পতিবার , ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

উল্লাপাড়ার কৃষিভিত্তিক কয়েকটি গ্রাম এখন মাছচাষের পুকুরে বন্দি ; ডিপকলটি দাঁড়িয়ে আছে নীরব সাক্ষী হয়ে

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
এখন আর বাতাসে ধানের গন্ধ নেই, কৃষকের মুখে হাসিও নেই। মাঠে নেই চাষের চেনা চিত্র, নেই শিশুদের ছুটোছুটি কিংবা কৃষাণীর গান। তার বদলে চারদিকে শুধু পানি, মাছের ঘের, উঁচু বাঁধ আর সীমারেখা টেনে দেওয়া নীল জাল। এক সময়ের প্রাণবন্ত কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলো আজ যেন নিঃশ্বাস নিচ্ছে সংকুচিত বুকভরে – সবই প্রশাসনের চোখের সামনে ঘটছে, অথচ নীরব তারা।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে দাঁড়িয়ে থাকা  ডিপকলটি যেন এই পরিবর্তনের জীবন্ত প্রমাণ। একসময় শত শত বিঘা জমিকে পানি দিয়ে উর্বর করে তুলতো এই ডিপকলটি। আজ সেটি রোদে-জলে জীর্ণ হয়ে পড়েছে, আর আশপাশের জমিগুলো ডুবে আছে পুকুরের পানিতে।
এই একক ঘটনা নয়। বিগত কয়েক বছরে উল্লাপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় শুরু হয়েছে অবৈধ, অপরিকল্পিত ও লোভনীয় পুকুর খননের হিড়িক। বিগত কিছু স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলেছে, যেন প্রশাসনের কোনো দায় নেই, চোখে পড়ে না কিছুই।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, তারা বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফলাফল শুন্য। যত্রতত্র পুকুর খননের অনুমতি বা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ নেই।
এক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন চাইলে একদিনেই এসব বন্ধ করতে পারত। কিন্তু তারা শুধু চেয়ে দেখে, যেন তাদের কোনো দায় নেই। এলাকার প্রবীণরা বলছেন, এমন অবস্থা আগে কখনো দেখা যায়নি। কৃষির জায়গা দখল করে এখন গড়ে উঠছে মাছের সাম্রাজ্য—যার মুনাফা যাচ্ছে কিছু গোষ্ঠীর পকেটে, আর ক্ষতির বোঝা বইতে হচ্ছে পুরো এলাকার সাধারণ মানুষকে।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে পুকুর কাটার ফলে এলাকার স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের পথ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে জলশুকা , উনুখাঁ , পাঠানপাড়া, চৈত্রহাটি , পুকুরপার , দবিরগঞ্জ , কুমারগাইলজানি , পাঁচান , কৈমাঝুড়িয়া , খৈইশ্বর , আগরপুর ,চকশ্বাদী গ্রামের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমি স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। উঁচু বাঁধের কারণে বর্ষার পানি আর আগের মতো মাঠ ছেড়ে বের হতে পারে না, ফলে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে তিন ফসলি  জমি ।
এই জলাবদ্ধতা শুধু কৃষিকে নয়, পুরো এলাকার পরিবেশকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অথচ এসব দুর্যোগের উৎস যে প্রশাসনিক গাফিলতি, তা যেন উচ্চারিত হওয়ার সুযোগই নেই।
রামকৃষ্ণপুরের সেই ডিপকলটি আজ আর শুধু একটি সেচযন্ত্র নয়—এটি দাঁড়িয়ে আছে এক অঞ্চল, এক সমাজ, এক কৃষি-সভ্যতার পতনের নিঃসঙ্গ সাক্ষী হয়ে।
এক শিক্ষক জানান, এই ডিপকল ছিল আমাদের আত্মার মতো। এখন সেটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে, যেভাবে আমাদের কৃষির স্বপ্নও পড়ে আছে মৃতপ্রায়।
প্রশ্ন উঠছে—এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? যারা পুকুর কেটে কৃষিভূমি ধ্বংস করছে, নাকি সেই প্রশাসন যারা তা দেখেও নীরব? অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াটা কি সরাসরি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়?
যতদিন প্রশাসন শক্ত হাতে ব্যবস্থা না নেবে, ততদিন এই অবস্থা চলতেই থাকবে। হারিয়ে যাবে আরও হাজারো বিঘা জমি, আরও শত শত কৃষকের জীবনজীবিকা।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুসালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে খাল খননের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
এখনই সময় জাগার, নাহলে খুব দেরি হয়ে যাবে।
উল্লাপাড়ার রামকৃষ্ণপুর আজ একটি সতর্কবার্তা। এটি কেবল কয়েকটি গ্রামের দুর্দশা নয়, বরং পুরো দেশের কৃষিভিত্তিক সমাজের জন্য এক কঠিন শিক্ষা। যদি এখনই প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই অবস্থা ছড়িয়ে পড়বে আরও বহু এলাকায়। কৃষি হারালে শুধু জমি হারায় না, হারায় জাতির ভবিষ্যৎ।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।