মোঃ নাজমুল হুদা,লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের লামা বন বিভাগের অন্তভূর্ক্ত বমু বিলছড়িতে বন্যহাতির তান্ডবে বসতঘর ভাংচুর,বাগান ও ফসলি ধানের ক্ষতি সাধন করেছে দুর্গম পাহাড়ি বন্যহাতির দল। দিনে -রাতে থেমে থেমে তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে চকরিয়া উপজেলার লামা বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের বমুরকুল (৬নংওয়ার্ড) এলাকার পূর্বাংশের ফকিরঝিরি এলাকার ৩টি বসতঘর। শনিবার দিবাগত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ১০-১২টি বন্যহাতি তান্ডব চালিয়ে এসব বসতঘর তছনছ করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, এ সময় হাতিগুলো মাড়িয়ে দিয়েছে ওই এলাকার পানিস্যাবিল,বমুরকুলের ৮ জন কৃষকের কলাবাগান ও ধান ক্ষেত । ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর কেউ খোলা আকাশের নিচে, আবার কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আজ বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাতিগুলো পুকুরিয়া খোলাস্থ হাতিমারাঝিরির আগায় অবস্থান করায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সূত্র জানা যায়, গহিন পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল শনিবার বিকালে বমু বিলছড়ির ইউনিয়নের বন বিভাগে রির্জাভ এলাকার বমুরকুলের পূূর্বাংশের ফকিরঝিরির চৌকিদারের ঘোনায় নেমে পড়ে। সেখানে কলাবাগানের অবস্থান করে ক্ষয়ক্ষতি করে গভীর রাত (১৬ আগষ্ট) ২ টায় প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ শাহ আলমের বসতঘর ভাঙচুর করে। এরপর রাতভর তান্ডব চালিয়ে একে একে একই গ্রামের বাসিন্দা মো. ইউনুচ ও ইয়াছমিনের বসতঘর তছনছ করে ধান খেয়ে ফেলে। এরপর হাতিগুলো ৮ জন কৃষকের ধানক্ষেত ও বাগানের কলা গাছ খেয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত মোঃ শাহ আলম, ইয়াছমিন আক্তার ও ইউনুচ জানান, শনিবার বিকাল ৫টার দিকে ১০-১২টি বন্যহাতি পাহাড়ের পূর্ব পাশ দিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ কথা জানাজানি হলে লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। রাতে গ্রামের মানুষ এক ঘণ্টার জন্যও ঘুমাতে পারেনি। হাতি কখন কার বাড়িতে ঢুকে পড়ে, এই ভয়ে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সেখানে বেঁচে থেকে যেন নতুন জীবন পেলাম। তারা আরও জানান, হাতিগুলো প্রথমে বাড়ির চারিদিকে ঘেরাও করে ফেলে। বিশেষ করে ঘরের দরজা জানালার পাশে পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
আর ঘর ভাঙা শুরু করে। পরে ঘরে থাকা ধান- চাল খেয়ে ফেলে। রাত জেগে আগুনের কুন্ডলি জ্বালিয়ে বাড়িঘর পাহারা দিয়ে হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েও রক্ষা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা মোঃ আহছান উল্লাহ জানান, আমরা অনেক রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে, ঢোল পিটিয়ে ও চিৎকার করেও বন্যহাতির দলকে সরানো যায় না। বেশি ভয় দেখালে আক্রমণের জন্য তেড়ে আসে। স্থানীয় বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতলব বলেন, হাতিগুলো এখনো এলাকায় অবস্থান করায় লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। পুনরায় যে কোনো মুহূর্তে তান্ডব চালিয়ে জান ও মালের ক্ষতিসাধন করতে পারে। সেক্ষেত্রে লামা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ নুরে আলম হাফিজ বলেন, পাহাড়ে খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল খুঁজে না পেয়ে লোকালয়ের দিকে ছুটে এসেছে বন্যহাতিগুলো। হাতিগুলোকে গভীর বনে সরিয়ে নিতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাজ করা হবে। বন্যহাতির কারণে ক্ষয়ক্ষতি হলে বন বিভাগের পক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলেও তিনি জানান।