শনিবার , ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ঐতিহ্য হারানোর শঙ্কায় শাঁখা শিল্প: সংকটে চাটমোহরের কারিগররা

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

বিবাহিত হিন্দু নারীদের হাতে থাকা সাদা শাঁখা শুধু অলংকার নয়, একটি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতীক। এক সময় এই শিল্পে মমতা, নিপুণতা আর সৃজনশীলতায় ভরপুর ছিল চাটমোহরের হান্ডিয়াল ও ডেফলচড়া এলাকার শাঁখারী পাড়া। আজ সেই শিল্প সংকটের মুখে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, মূলধনের অভাব, আর বাজারে আগ্রহ কমে যাওয়ার ফলে দিনকে দিন এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কারিগরেরা।

জানা গেছে, পাবনার এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে শাঁখা শিল্পের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। পরিবার ভিত্তিক এই শিল্পে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যুক্ত রয়েছেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে শঙ্খ কেটে শাঁখা তৈরির কাজ। তৈরি হয় ধলা, জাজী, কড়ি, মনিপুরী ও ভিআইপি ডিজাইনের শাঁখা। প্রতিটির দাম মানভেদে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।

প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় থাকা শ্রী বাবলু ধর জানান, আগে লাভজনক হলেও এখন টিকে থাকাই কঠিন। তিনি বলেন, এখনকার বাজারে চাহিদা নেই, খরচ বেড়ে গেছে। তার মতো অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
পরিতস ধর বলেন, একসময় এই পাড়ার প্রায় প্রতিটি পরিবার এই শিল্পে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩৪টি পরিবার কোনোভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কাঁচামাল মূলত ভারত থেকে আনতে হয়, ফলে খরচও বেশি পড়ে। নিজেদের তৈরি শাঁখা বিক্রি করতে তারা ছুটে যান বিভিন্ন জেলায়।

নারী কারিগর নীলা বতী সেন জানান, ছোটবেলায় বাবার বাড়িতে শিখেছিলেন এই শিল্প। এখন শ্বশুরবাড়িতে করছেন শাঁখার কাজ, সংসারের পাশাপাশি বাড়তি আয় হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সরকারি সহায়তা পেলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব।

চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মনজিৎসেন শুভ বলেন, এই শিল্পের টিকে থাকার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি। পণ্যের মান উন্নয়ন ও রপ্তানির সুযোগ থাকলে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। অনেকেই জানান, এই পেশায় আর আগের মতো কর্মসংস্থান নেই।

মৃত্যুঞ্জয় জয় সেন, দীপ্ত সেন, অন্তুু কুমার ও ষষ্ঠী সেন বলেন, তারা এখন দিনমজুরি কিংবা অন্য কাজ করছেন। কিন্তু মনে আশা রয়েছে, সরকার সহযোগিতা করলে আবারও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো: শামীম হোসেন জানান, বিসিক শুধু আর্থিক নয়, ডিজাইন, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নেও এই শিল্পের পাশে থাকবে।

প্রাচীন এই লোকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন যুগোপযোগী পদক্ষেপ। না হলে একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে বাপ-দাদার ঐতিহ্য শাঁখার শিল্প।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।