শুক্রবার , ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২৭শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সদ্যপ্রয়াত চিত্রনায়ক সাত্তারের গল্প অনেকটাই অন্যরকম

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০

এম এস শবনম শাহীন:

নায়কের যাত্রা হয়ে রূপালি ফিতায়, গল্প থাকে চিত্রনাট্যে, আর সমাপ্তি ঘটে যবনিকায়। বাংলা সিনেমার ফোক সিনেমার অমর নায়ক সাত্তারের গল্প অনেকটা এমনই। উর্দু ভাষার দাপটে সেই নিজের কৃষ্টিকে পুঁজি করে বাংলা সিনেমার যে জয় যাত্রা শুরু হয়- তার অন্যতম সৈনিক ছিলেন সাত্তার। হয়েছেন অসংখ্য ফোক সিনেমার মূল পাত্র। এই বছরে ম্রত্যুর মিছিলে তার প্রয়াণটা একটু নীরবেই মেনে ণি বাংলা সিনেমার জগৎ। কিন্তু দর্শক বা সমালোচকদের চোখে সাত্তার মানে তরবারি খোলা পর্দা কাঁপানো হিরোর আগমণ। সিনেমা মুলতঃ কি? একটা অডিও ভিডিও সংমিশ্রণ, একটা টিম ওয়ার্ক। এখানে লেখক চিত্রনাট্য লেখে, প্রযোজক বিনিয়োগ করে, সে অনুযায়ী অভিনেতা অভিনেত্রী থাকে, চিত্রগ্রাহক থাকে, পরিচালক থাকে, শব্দের লোক থাকে, বিভিন্ন টেকনিশিয়ান থাকে সবাই মিলে একটা লক্ষ্য পূরণে কাজ করে। দর্শক তা হলে বসে উপভোগ করলে সফল অথবা দর্শক না আসলে ব্যর্থতা। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জীবন থাকে সিনেমার মতই বেদনার।

 

তখন আপনি ভাবতেই পারেন সিনেমার লোক বলেই এত কষ্ট। সেরকম কষ্ট পাওয়া এক জীবনের মানুষ চির দিনের জন্য চলে গেলেন। তিনি নায়ক সাত্তার। চলচ্চিত্রে সাত্তারের প্রথম উপস্থিতি ১৯৬৮ সালে। ইবনে মিজানের ‘আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী’ ছবিতে শিশুশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার নায়ক হয়ে ওঠার ঘটনা আরও পরে। ১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে কাজ করেন কাজী হায়াৎ এর ‘পাগলী’ ছবিতে। আজিজুর রহমানের ‘রঙ্গিন রূপবান’, ‘অরুন বরুণ কিরণ মালা’, ‘কাঞ্চন মালা’, ইবনে মিজানের ‘পাতাল বিজয়’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘শুভদা’, মিলন চৌধুরীর ‘রঙ্গিন সাত ভাই চম্পা’- সাত্তার অভিনীত চলচ্চিত্র সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। এরপরের গল্পটা ট্রাজেডি গল্পের নায়কের মতোই। তিনি ২০১২ সালে স্ট্রোক করে প্যারালাইসড হয়ে যান। এছাড়া ফুসফুস সহ শরীরে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধে। হাসপাতালের বিছানাতেই কেটেছে তার দীর্ঘদিন। এত অসুস্থতার ভেতরেও তিনি হার মানতে চাইতেন না। ভাবতেন তিনি আবার ঘুরে দাঁড়াবেন। তার সবশেষ অভিনীত ছবি ছিল, ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’! আবার অভিনয়ে ফিরতে চাইতেন। ফিরেও ছিলেন এক বাংলা নাটকে, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবার চরিত্রে অভিনয় করে। আসলেই তো তার জীবন সেটাই। চলচ্চিত্রের এত রথীমহারথীদের সাথে কাজ করেছেন।

 

কেউই খোজ রাখতো না। চ্যানেল আই শুধু তার জন্যে মাসিক বরাদ্দ রেখেছিল। আর প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা পেয়েছিলেন। এ টাকা গুলো না পেলে তিনি আরো আগেই চলে যেতেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর সংসারে কেউ দ্বায়িত্ব নেয় নাই, দীর্ঘদিন অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি সেবা সব করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী। তার ভালোবাসাতেই বেঁচে আবার সুস্থ হতে চাইতেন। প্রতিদিন নাকি তার স্ত্রীকে বলতেন, ‘এফডিসির কেউ এসেছিল নাকি? ‘ এত এত শিল্পী সমিতির ইলেকশনে বারবার বলা হয়েছে সাত্তারের অসুস্থতার কথা। সবাই খালি আশ্বাস দিয়ে দায় মিটিয়েছে। শিল্পীরা যখন অসুস্থ ও অর্থভাবে ভুগে তখন তাদের জীবন কতটা কঠিন তারই একটা নিদর্শন নায়ক সাত্তার। ফোক হিরোদের মতোই ট্রাজেডিতে ঠাসা জীবনে মৃত্যুই হলো তার শেষ গন্তব্য। বেঁচে থাকতে তিনি নিউজ হতে পারেননি, মরে গিয়েই নিউজ হলেন।

 

সবাই বলছে, রঙ্গীন রূপবানের নায়কের বিদায়। নব্বই দশকের আমরা বুঝবো না ফোক ছবির মর্ম। অথচ বাংলাদেশের ফোক ধারার ছবি ছিল বানিজ্যিক ভাবে অত্যন্ত সফল। সেই পাকিস্তান আমলে উর্দু ছবির সাথে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের এ ধারার ছবি শুরু। আমাদের চিরায়ত যাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয় এ ছবিগুলো। যাত্রা শিল্পও চলছে ধুঁকে ধুঁকে, এ ধরনের সিনেমার সাথে জড়িতরাও সাত্তারের মত ট্রাজেডি হিরো হয়ে চলে যাচ্ছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।