শুক্রবার , ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কোরবানীর গুরুত্ব ও ফজীলাত – মুফতি মাওলানা: শামীম আহমেদ

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪
আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অনুগত হয়ে নিজের মনের হিংসা-বিদ্বেষ, রাগ-অভিমানসহ সব ধরনের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার জন্য পবিত্র ও হালাল পশু আল্লাহর নামে জবাই করার নাম কোরবানি। কোরবানি করার পর একজন মুসলমানের মন পরিষ্কার এবং সুন্দর হয়। গরিব-দুঃখী এবং আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণের ফলে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়।
একে অপরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়। মানুষ যত বড় জন্তুই কোরবানি করুক না কেন, তার গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং পৌঁছে মনের অবস্থা, কোরবানিদাতা পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করেছে কি না এবং জন্তু ক্রয়ের সময় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি মনে ছিল কিনা!
কোরবানি মুসলিম সমাজের একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত ইবাদত। যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজ কোরবানি দিয়ে এসেছে। ঈদের দিনগুলোতে সারা বিশ্বে লাখো-কোটি পশু কোরবানি হচ্ছে। আল্লাহপাক এর মধ্যে বরকত রেখেছেন। কোরবানির সম্পর্কে হজরত মিখজাফ ইবনে সালিম (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে সমবেত লোকদেরকে সম্বোধন করে একথা বলতে শুনেছি, ‘হে লোক সকল! তোমরা জেনে রাখ, প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর প্রত্যেক বছরই কোরবানি করা কর্তব্য। আর যার সামর্থ্য নেই তাদের ওপর কোরবানি কর্তব্য নয়। কারণ আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যের বাইরে।’ (তিরমিজি)। বোঝা গেল, কোরবানি করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার ১০ বছর জীবনের প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস-১৫০৭)
কোরবানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর স্মৃতি। হজরত ইবরাহীম (আ.) ত্যাগের পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বে নিজের সন্তানের গলায় ধারালো খঞ্জর চালিয়েছিলেন। তার এ আত্মত্যাগ আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, কেয়ামত পর্যন্ত সব সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর সেই ইবরাহীম (আ.)-এর স্মৃতির অনুশীলনে কোরবানি করা ওয়াজিব। একবার সাহাবায়ে-কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোরবানির তাৎপর্য কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কোরবানি করা এটা তোমাদের ধর্মীয় পিতা হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব হবে এবং কোরবানির দিন আল্লাহতায়ালার নিকট পশু জবাই অপেক্ষা অন্য কোনো আমল বেশি পছন্দনীয় নয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৬০)
কেয়ামতের দিন কোরবানিকৃত প্রাণী ও তার লোম, খুর ও শিংহসহ উপস্থিত হবে। তার রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। কোরবানি শুধু এক আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য হাসিলের জন্যই করা হয়। কেননা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি তোমার পালনকর্তার উদ্দেশ্যেই নামাজ পড় এবং কোরবানি করো।’ (সুরা কাওসার)।
আল্লাহর নিকট আমাদের কোরবানির গোশত ও রক্ত পৌঁছে না, বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া ও পরহেজগারি পৌঁছে থাকে। (সুরা হজ : ৩৭)
সুতরাং কোরবানির করার আড়ালে যদি গোশত খাওয়া, লৌকিকতা অথবা এরূপ কোনো হীনস্বার্থ জড়িত থাকে তা হলে সম্পূর্ণ কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে শুধু নিজের গৌরব বা ক্ষমতা দেখানোর মানসিকতা। কে কত বড় ও দামি গরু কিনবে এটা নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। গরুর গলায় মালা ঝুলিয়ে রাস্তায় ঘোরানো এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করার হিড়িক পড়ে যায়। আর এটাকে বলে প্রদর্শনেচ্ছা বা লোক দেখানো ইবাদত। ফলে কোরবানি করার পরও মানুষের মনের কোনো পরিবর্তন হয় না; বরং আগের তুলনায় হিংসা-বিদ্বেষ এবং শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। আর এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে না। এতে কোরবানির প্রধান উদ্দেশ্যই হাতছাড়া হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সহিহ নিয়তে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন।

সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি-০১৭১৩-৫৮২৪০৬, নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রায়হান আলী-০১৭৫১-১৫৫৪৫৫, বার্তা সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন-০১৭৪০-৩২১৬৮১। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ মেছের উদ্দিন সুপার মার্কেট ভবন, হান্ডিয়াল বাজার, চাটমোহর, পাবনা থেকে প্রকাশিত। ঢাকা অফিসঃ তুষারধারা, আর/এ, সেক্টর ১১, রোড নং ০৭, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১৩৬২। বার্তা কার্যালয়ঃ অষ্টমনিষা বাজার, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। প্রকাশক কর্তৃক সজল আর্ট প্রেস, রূপকথা গলি, পাবনা থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর-০১৭৪৯-০২২৯২২,ই-মেইল- newscbalo@gmail.com / editorcbalo@gmail.com / www.chalonbileralo.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ©2017-2025 (এটি গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ) অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকৃত। আবেদন নম্বর- ২১৮৮।